ভৌম দোষ মাঙ্গলিক বা দোষ ভৌম দোষ থেকে রেহাই
- Ayan Ghosh
- Mar 2
- 2 min read
ভৌম দোষ, যা সাধারণত মাঙ্গলিক দোষ নামে পরিচিত, জ্যোতিষশাস্ত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি একজন ব্যক্তির জন্মকুণ্ডলীতে মঙ্গল গ্রহের অবস্থানের কারণে সৃষ্ট হয় এবং বিবাহিত জীবনে নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়। এই দোষের কারণে বিবাহিত জীবনে দাম্পত্য কলহ, দেরিতে বিয়ে, বা বৈবাহিক জীবনে বিভিন্ন সংকট দেখা দিতে পারে। তবে উপযুক্ত প্রতিকার ও বিধানের মাধ্যমে এই দোষের প্রভাব কমানো সম্ভব।

ভৌম দোষ কী?
ভৌম দোষ তখনই হয় যখন মঙ্গল গ্রহ জন্মকুণ্ডলীর ১ম, ৪র্থ, ৭ম, ৮ম, বা ১২তম ঘরে অবস্থান করে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, মঙ্গলকে আগ্রাসী ও যুদ্ধপ্রবণ গ্রহ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা ব্যক্তি ও তার সঙ্গীর মধ্যে কলহ বা কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

ভৌম দোষের কারণ
ভৌম দোষ তখন সৃষ্টি হয় যখন:
মঙ্গল গ্রহ ১ম ঘরে - ব্যক্তি রাগী, অধৈর্য ও সহজেই উত্তেজিত হতে পারে।
মঙ্গল গ্রহ ৪র্থ ঘরে - পরিবারে অশান্তি এবং পারিবারিক জীবনে সমস্যা দেখা দেয়।
মঙ্গল গ্রহ ৭ম ঘরে - বিবাহিত জীবনে সংঘাত এবং বিবাহ বিচ্ছেদের সম্ভাবনা থাকে।
মঙ্গল গ্রহ ৮ম ঘরে - আর্থিক সংকট ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।
মঙ্গল গ্রহ ১২তম ঘরে - মানসিক চাপ, ব্যয়বহুল জীবনযাত্রা এবং বৈবাহিক জীবনে সমস্যা দেখা দেয়।

ভৌম দোষের প্রভাব
বিবাহ দেরিতে হওয়া - এই দোষ থাকলে সাধারণত বিবাহ দেরিতে হয়।
দাম্পত্য জীবনে কলহ - স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্য সমস্যা - মঙ্গল দোষযুক্ত ব্যক্তির শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
আর্থিক অনিশ্চয়তা - ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং আর্থিক অস্থিরতা দেখা দেয়।
বিচ্ছেদের সম্ভাবনা - দোষের তীব্রতা বেশি হলে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটতে পারে।

ভৌম দোষ নির্ণয়
কোনো ব্যক্তির জন্মকুণ্ডলীতে মাঙ্গলিক দোষ আছে কিনা তা জানতে হলে একজন দক্ষ জ্যোতিষীর মাধ্যমে কুণ্ডলী বিশ্লেষণ করা উচিত।
ভৌম দোষের প্রতিকার
ভৌম দোষের প্রভাব কমানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিকার রয়েছে, যা ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক উপায়ে করা হয়।
মাঙ্গলিক দোষ নিবারণের জন্য পবিত্র বিবাহ
যদি কোনো ব্যক্তি মাঙ্গলিক হয়, তবে তাকে প্রথমে কোনো নির্দিষ্ট দেবতা, বৃক্ষ বা প্রতীকী কোনো পদার্থের সাথে বিবাহ দেওয়া হয়, যা ‘কুম্ভ বিবাহ’ বা ‘বিশেষ যজ্ঞ’ হিসেবে পরিচিত।

উপাসনা ও মন্ত্র জপ
হনুমান চালিসা পাঠ: প্রতি মঙ্গলবার পাঠ করলে মাঙ্গলিক দোষ হ্রাস পায়।
মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ: ১০৮ বার জপ করা শুভ ফল প্রদান করে।
মঙ্গলারতি ও রুদ্রাভিষেক: মঙ্গলবার শিব মন্দিরে অর্ঘ্য দিলে দোষ কমে।
বিশেষ রত্ন ধারণ
রক্তপ্রবাল (Coral) পাথর ধারণ করলে মঙ্গল গ্রহের শুভ প্রভাব পাওয়া যায়।
তামা ও রৌপ্য সামগ্রী ব্যবহার করা উপকারী।
৪. দান ও পূজা
গরিব ও ব্রাহ্মণদের লাল বস্তু, লাল চন্দন, তামা, মসুর ডাল দান করা উচিত।
মঙ্গলবার দিনে মন্দিরে গরুর খাবার প্রদান করলে মঙ্গল গ্রহের কুপ্রভাব কমে।
৫. নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস ও আচরণ
নিরামিষ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
মঙ্গলবার উপবাস করলে মঙ্গল গ্রহের কুপ্রভাব কমতে পারে।
ভৌম দোষ বা মাঙ্গলিক দোষ হলেও এর প্রতিকার সম্ভব। দোষের প্রকৃতি ও তীব্রতা বুঝে যথাযথ প্রতিকার গ্রহণ করলে বিবাহিত জীবনে সুখ-শান্তি বজায় রাখা সম্ভব। ধর্মীয় রীতি অনুসরণ, সৎকর্ম এবং ধৈর্য সহকারে জীবনযাপন করলে এই দোষের প্রভাব কমে যায়।

Comments