যোটক বিচার ছাড়াও আর কী কী লক্ষণ বিচার করা দরকার ?
- ভাগ্যফল
- May 15
- 8 min read
ডঃ জয়ন্ত তপাদার
(সনাতন কৃষ্ণমূর্তি, হস্তরেখা, সংখ্যাতত্ত্ব, বাস্তু ও হোরারী বিশেষজ্ঞ)

বিবাহ হল সেই পার্থিব বন্ধন যার মাধ্যমে একটি পুরুষ ও একটি নারী পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, আস্থা, বিশাস—এই গভীর স্পর্শকাতর অনুভূতিগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় ও সারাজীবন একসাথে চলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় শর্তহীনভাবে। কিন্তু আজ এই অতি আধুনিক সমাজজীবনে বিবাহের সংজ্ঞা বোধহয় ফিকে হয়ে যাচ্ছে। নাহলে টিভি, খবরের কাগজ ইত্যাদিতে আমরা প্রায় প্রত্যহই দেখতে পাই অজস্র ডিভোর্স, পরকীয়া থেকে খুন, নিত্যদিন পারিবারিক অশান্তি, মারধর করা—তার থেকে থানা পুলিশ ইত্যাদি। যেকোনো আদালতে আপনি যদি একটু নজর করেন তো দেখবেন সবচেয়ে বেশি মামলা হচ্ছে ডিভোর্স, পারিবারিক বিবাদ, আর জমি-বাড়ি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে। আর যত ডিভোর্স বা পারিবারিক বিবাদের মামলা হয় তার মধ্যে অন্তত 95 শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় বিবাহটা ছিল পাত্র-পাত্রীর নিজেদের পছন্দের। বিয়ে অর্থাৎ এক্ষেত্রে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ নয়, অর্থাৎ বাবা-মা’র মতামত ব্যতিরেকে বিয়ের ঘটনা। যেটাকে আমরা এক কথায় ‘লাভ ম্যারেজ’ বা প্রেমজ বিবাহ বলে থাকি। এসব ক্ষেত্রে ছেলেটি আর মেয়েটি হয়তো একসাথে পড়াশোনা করে কিংবা কর্মক্ষেত্রে একই সঙ্গে কর্মরত। অথবা বাড়ির পাশাপাশি একই পাড়াতে দুজনার বাস, যেখানে দুজনার প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার সুযোগ আছে। তারপর তো আজকের যুগের সবচেয়ে শক্তিশালী যোগাযোগের মাধ্যম অর্থাৎ স্মার্ট ফোন তো আছেই। যার মাধমে ফেস বুক, ম্যাসেঞ্জার, ইনস্ট্রাগ্রাম, হোয়াটস্ অ্যাপ ইত্যাদির মাধ্যমে যখন তখন অডিও-ভিডিও কল করে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে নানা তথ্য বিনিময় করতে পারছে অভিভাবকের অজান্তেই।
যদি কখনো মা-বাবা বিষয়টি জানতে পেরে সন্তানের ভবিষ্যতের সমস্যার কথা মাথায় রেখে তাদের এই মেলামেশা বা যোগাযোগ বন্ধ করবার পরামর্শ দেয়, তবে তা সেই প্রণয়াসক্ত ছেলে বা মেয়েটি শোনেই না, উপরন্তু বাবা-মাকে চরম শত্রু বলে বিবেচনা করে চরম অশান্তি করে। কখনো কখনো দেখা যায় যে ছেলে ও মেয়েটি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে কোনো মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে ফেলল। এসব ক্ষেত্রে কারো রাশি, লগ্ন, নক্ষত্র, গণ, মাঙ্গলিক দোষ—ইত্যাদির বিচার করা হয় না। আর এর পরিণতি স্বরূপ এই ধরনের বিবাহের কিছুদিনের মধ্যেই মোহ ভঙ্গ হয়, আর শুরু হয় দুজনের মধ্যে চরম অশান্তি। ফলস্বরূপ মেয়েটি বাবার বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হয় বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেয়েটিকে একাই আত্মহত্যা করতে বা দুজনকে একসঙ্গে আত্মহত্যা করতে দেখা যায়। টিভি বা খবরের কাগজ খুললে আমরা হামেশাই এরকম খবর দেখতে পাই যে, ‘রেল লাইনের ওপর কিংবা গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় প্রেমিক যুগলের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে’। এর থেকে এটা তো বোঝা গেল যে, একটি সুস্থ, সুন্দর, সুখী বিবাহিত জীবনের জন্য যোটক বিচার তো বটেই, সঙ্গে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিচার করা অত্যাবশ্যক।

বিবরণ পাত্র পাত্রী পূর্ণাঙ্ক প্রাপ্তাঙ্ক অভিপ্রায়
বর্ণকূট বিপ্র শূদ্র 1 1 দৈবিক বিকাশ
বশ্যকূট জনচর দ্বিপদ 2 0.5 প্রাকৃতিক সামঞ্জস্য
তারাকূট ফেম ফেম 3 1.5 সম্পর্কের স্থায়িত্ব
যোনিকূট হস্তি কুকুর 4 2 প্রত্যক্ষ গুণ
গ্রহ মৈত্রী বৃহস্পতি বুধ 5 0.5 সম্পর্কের স্থায়িত্ব
গণকূট দেব মনুষ্য 6 6 দাম্পত্য ঐক্য
রাশিকূট মীন মিথুন 7 7 পারস্পরিক যোগ্যতা
নাড়ীকূট অন্ত আদি 8 8 মানসিক প্রকৃতি
(শ্লেষ্মা) (বাত)
যোগ 36 26.5 73.61

যোটক বিচারে আমরা পাত্র ও পাত্রীর বেশ কয়েকটি বিষয়কে পাশাপাশি রেখে তাকে সংখ্যা দ্বারা মূল্যায়ন করে থাকি। এখানে সর্বোচ্চ অঙ্ক হবে 36, এর মধ্যে অন্তত 18 অঙ্ক পেতেই হবে। আমি একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি যে একটি পাত্র ও পাত্রীর জন্মছক থেকে কীভাবে যোটক বিচার করা হয় ওপরের ছকে উদাহরণ হিসাবে দেখানো হল।
এবার যে বিষয়গুলো যোটক বিচার থেকে পাওয়া যাবে না অথচ বিবাহের পূর্বে এগুলো অতি যত্ন সহকারে বিচার বিশ্লেষণ করে বিবাহ না দিলে বিবাহিত জীবন যে একেবারে পোড়া কয়লায় পরিণত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ঠিক এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েই এখানে আলোচনা করব।

আমাদেরকে এটা মনে রাখতে হবে যে, যখন কোনো জ্যোতিষীর কাছে যাবেন বিবাহের ব্যাপারে পরামর্শ করতে, তখন ওই জ্যোতিষীকে দেখতে হবে ছেলে ও মেয়ের জন্মছক, আলাদা আলাদা ভাবে। আর এরপর ওই দুটো জন্মছক থেকে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বিচার-বিশ্লেষণ করে তৈরি করতে হবে ‘ম্যারেজ ম্যাচিং চার্ট’ অর্থাৎ যোটক বিচার সারণী। তাহলে মোট তিনটি জন্মছক দেখার পরিশ্রম ও সময় প্রয়োজন হবে এক্ষেত্রে। তাই এক্ষেত্রে জ্যোতিষীর পারিশ্রমিক হবে স্বাভাবিক ফিসের আড়াই থেকে তিন গুণ। এতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই।

এবার আসি যোটক বিচার ছাড়া আর কী কী অতি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ অতি অবশ্যই বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন হবে বিবাহের জন্য। রাশিতে মোট 12টি ভাব বা ঘর থাকে। লগ্নকে প্রথম ভাব (ঘর) ধরে নিয়ে অ্যান্টিক্লক ওয়াইজ গণনা করলে এক একটি ঘর থেকে বারোটি করে অর্থাৎ (12 x 12) = 144টি বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়। আমরা যখন কোনো বিবাহের বিষয়ে অগ্রসর হব তখন প্রথমেই কী দেখি—অবশ্যই পাত্র-পাত্রীর শারীরিক গঠন, গাত্রবর্ণ, আকার অর্থাৎ মোটা নাকি রোগা ইত্যাদি। কারণ আপনি কখনোই চাইবেন না যে একজনের উচ্চতা হয়তো সাড়ে 6 ফুট, আরেকজনের মাত্র 4 ফুট। এইরকম কোনো কম্বিনেশন বড় হাস্যকর হয়ে পড়ে। ব্যক্তির ব্যক্তিত্বও এই লগ্নভাব থেকে বিচার করা হয়। লগ্নপতি দুর্বল হলে সেই মানুষটির মধ্যে সবসময় ক্লান্তি, দুর্বলতা, আলসেমি দেখা যায়। আমরা এতদিনে জেনে গেছি যে জন্মছকের ষষ্ঠ, অষ্টম ও দ্বাদশ হল অশুভ ভাব। তাই লগ্নপতি যদি এই তিনটি স্থানের কোনও একটিতে অবস্থান করে বা ওই ভাবের অধিপতি গ্রহের নক্ষত্রে অবস্থান করে কিংবা ষষ্ঠ, অষ্টম বা দ্বাদশ ভাবপতির দ্বারা যদি লগ্ন ভাবটি দৃষ্ট হয় তবে সেই জাতক বা জাতিকার শরীর-স্বাস্থ্য ভালো যাবে না, কর্মোদ্যম থাকবে না, সমস্ত কাজেই বাধা আসবে। প্রথম সন্তানের উচ্চ শিক্ষা, মন, পড়াশোনার কারণে হোস্টেলে থাকা ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ই বিচার করা হয় লগ্নভাব থেকে।

এবার দেখা হয় পাত্র-পাত্রী তার নতুন সম্পর্কের বাঁধনে যুক্ত হওয়া দুই পরিবারের সদস্যদের সাথে কতটা সুসম্পর্ক রাখবে। মুখের ভাষা কেমন হবে, কথায় কথায় গালিগালজ কববে না তো? কেউ কোনো নেশাতে আসক্ত নয় তো! যা রোজগার করবে তার থেকে সঞ্চয় করতে পারবে তো, নাকি ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে যাবে। এ সমস্ত কিছুই উত্তর মিলবে পাত্র-পাত্রীর জন্মছকের দ্বিতীয়ভাব থেকে। দ্বিতীয় ভাবে যদি রাহু বা রাহু-চন্দ্র অবস্থান করে তবে সে মদ্যপানে আসক্ত হবে। যদি এই স্থানে শনি-কেতু কিংবা শনি-রাহু অবস্থান করে তবে সেই ব্যক্তি হেরোইন, গাঁজা, ড্রাগ ইত্যাদি শুকনো নেশাতে আসক্ত হয়ে পড়তে পারে। দ্বিতীয়ে রাহু মানুষের মুখের ভাষাকে কদর্য করে তোলে আর ভীষণ বেহিসেবি করে তোলে, একসময় ভীষণ ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ে কেতু অথবা শনির অবস্থান ভীষণ আর্থিক কষ্ট দেয়। দ্বিতীয়ে রাহু বা মঙ্গল-রাহু অথবা শনি-রাহু কিংবা মঙ্গল-শনি এই অশুভ গ্রহ সংযোগে জাতক-জাতিকার সঙ্গে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে বিরোধ, বিচ্ছেদ হয়। সুসম্পর্ক বজায় থাকে না। এগুলো সবই জন্মছকের দ্বিতীয় ভাব থেকে আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত হই।
বিবহের পর গৃহে শান্তি বজায় থাকবে তো! বাড়িতে ঢুকলেই মনে হবে না তো এ কোথায় এলাম, সব সময় যেন যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব, অশান্তির বাতাবরণ। এটা হিসাব করা হয় জন্মছকের চতুর্থ ভাব থেকে। চতুর্থে যদি শনি, মঙ্গল, রাহু বা কেতুর মতো কোনো একটি গ্রহ অবস্থ্ান করে বা চতুর্থ ভাবের অধিপতি গ্রহ যদি কোনওভাবে এই গ্রহগুলোর কোনো একটির সাথে যুক্ত হয় তবে এই অসুবিধা ভোগ করতে হয়।

যারা পরামর্শ নিতে আসেন বিবাহের ব্যাপারে, তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন, ভীত, সন্ত্রস্ত যে আমার ছেলেটা কিংবা মেয়েটা সঠিক চরিত্রবান, সৎ জীবনসঙ্গী খুঁজে পাবে তো! নাকি একটা ধরছে, আবার দু’চার দিন পর ছেড়ে দিচ্ছে। আবার নতুন কোনো ছেলে বা মেয়ের সম্পর্কে জড়াচ্ছে। এইরকম চরম দুশ্চরিত্র, নীতিজ্ঞানহীন কারো সাথে বিবাহ হয়ে জীবনটাই বরবাদ হযে যাবে। এখন এই অতি আধুনিক যুগে টিভি, খবরের কাগজ ইত্যাদিতে প্রায় রোজই এমন বহু খবর দেখা যায় যে বিয়ে হয়ে গিয়েছে বা পাত্র তার আগের সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা কোনো মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে পাত্র ও পাত্রীর দু’ পক্ষেরই মানসিক অবস্থা ও সামাজিক সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে একবার ভেবে দেখুন। আবার বিয়েটা হয়তো ভালোয় ভালোয় মিটে গেল। তরপর মেয়েটা কিংবা ছেলেটা লক্ষ করতে থাকল যে তার জীবনসঙ্গী কারো সঙ্গে গোপনে ফোনে ব্যস্ত থাকে, হোয়াট্স অ্যাপে চ্যাট করে বা ফোন কোনোমতেই নিজের কাছছাড়া করতে চায় না যাতে তার ব্যক্তিগত গোপন জীবনের অজানা তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।

এইসব অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের হদিশ আমরা অর্থাৎ জ্যোতিষীরা পেয়ে থাকি রাশিচক্রের পঞ্চম ভাব থেকে। জন্মছকের পঞ্চম ভাবে রাহু অবস্থান করলে বা রাহু-শুক্র কিংবা রাহু-শুক্র-মঙ্গল এই সংযোগে এই ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া পঞ্চম ভাবে রাহুর দৃষ্টি বা পঞ্চম ভাবপতি রাহুর নক্ষত্রে অবস্থান বা পঞ্চমভাব যদি কোনো নৈসর্গিক শুভ গ্রহের প্রেক্ষা না পায় তবে জাতক-জাতিকার নৈতিক চরিত্র ঠিক থাকে না। বিয়ের আগে পাত্র বা পাত্রী একাধিক অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছে কি না, প্রতারক কি না, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কি না, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কি না তার সমস্ত হিসাব-নিকাশ করা হয় এই পঞ্চম ভাব থেকেই।
এবার বিয়ে তো দেবেন বলে মনস্থির করে ফেলেছেন। তবে আপনার হবু জামাই বা পুত্রবধূ শারীরিকভাবে সুস্থ তো? কোনো গুরুতর সমস্যায় ভুগছে না তো? এসব প্রশ্নের উত্তর মেলে জন্মছকের ষষ্ঠ ভাব থেকে। লগ্নভাব যদি কোনোভাবে ষষ্ঠ ভাব বা ষষ্ঠ ভাবপতির সাথে সংযুক্ত হয় তবে নানারকম রোগে ভুগতে হবে। লগ্নপতি যদি ষষ্ঠ ভাবে আসীন হয় তবে শরীর কখনোই সুস্থ থাকবে না। ষষ্ঠ ভাবপতি গ্রহ যদি শনির সঙ্গে যুক্ত হয় তবে হাড়ের সমস্যায় কষ্ট পাবেন জাতক-জাতিকা।

আরও কিছু সূত্র দিচ্ছি এ বিষয়ে—
ষষ্ঠ ভাব + চন্দ্র—সর্দিকাশির রোগ; ষষ্ঠ ভাব + মঙ্গল—উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল; ষষ্ঠ ভাব + মঙ্গল + শুক্র—ডায়াবেটিস; ষষ্ঠ ভাব + রবি—চোখ, মেরুদন্ড কিংবা হার্টের সমস্যা; ষষ্ঠ ভাব + বৃহস্পতি—স্থূলত্ব; ষষ্ঠ ভাব + বুধ
—নাক, কান, গলার সমস্যা; ষষ্ঠ ভাব + শুক্র + রাহু—যৌন রোগ; ষষ্ঠ ভাব + বুধ + কেতু—চর্মরোগ; শুধু তাই নয়, ষষ্ঠ ভাব + কেতু
—যে রোগেই আক্রান্ত হোক না কেন, চিকিৎসক সেই রোগ সহজে নিরূপণ করে উঠতে পারবেন না। ষষ্ঠ ভাব থেকে রোগ, অষ্টম ভাব থেকে মৃত্যু এবং দ্বাদশ ভাব থেকে হাসপাতাল, নার্সিংহোমকে বোঝায়। তাই জন্মছকে যদি কোনওভাবে ষষ্ঠ ভাব, অষ্টম ভাব ও দ্বাদশ ভাব বা ভাবপতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে তবে সেই জাতকের রোগভোগ মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে।
যখন জাতক-জাতিকার ব্যক্তিগত জন্মছকে এই ভাবগুলোর দশা, অন্তর্দশা ও প্রত্যন্তর্দশা (DAP) চলবে তখনই এই দু-খজনক ঘটনা ঘটে।
আবার লগ্ন ভাব যদি কোনওভাবে অষ্টম ভাবের সঙ্গে যুক্ত হয় তবে দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা বোঝায়, যেখানে মঙ্গল কিংবা মঙ্গল-কেতুও যুক্ত হয়। লগ্ন + অষ্টম + রাহু + মঙ্গল—আগুনে পুড়ে মৃত্যু ঘটে। লগ্ন + অষ্টম + রাহু + বৃহস্পতি—ক্যানসার, লগ্ন + বৃহস্পতি + শুক্র + চন্দ্র—ডায়াবেটিস, লগ্ন + কেতু + মঙ্গল + শনি—হঠাৎ গুলি লেগে বা কোনো বোমা বিস্ফোরণের কারণে মৃত্যু ঘটতে পারে।
এবার আসি এমন একটি বিষয়ে যেটা বিবাহের বিষয়ে পাত্র বা পাত্রী নির্বাচণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের দাবী রাখে। সেটা হল ভৌম দোষ। যদিও এটাকে সাধারণত মানুষ মাঙ্গলিক দোষ বলেই জানে। ‘মাঙ্গলিক’ কথাটির অর্থ মঙ্গলকারক। কিন্তু যেহেতু মঙ্গল গ্রহটি এই বিষয়টির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাই সবাই এই দোষটিকে মাঙ্গলিক দোষ বলেই অভিহিত করেন। আমরা কী করে বুঝব যে পাত্র বা পাত্রী মাঙ্গলিক দোষ যুক্ত। যে জন্মছকে মঙ্গল গ্রহটি এই পাঁচটি অবস্থানের কোনো একটিতে অবস্থান করছে সেই জাতক-জাতিকা মাঙ্গলিক দোষে দুষ্ট। এই পাঁচটি অবস্থান হল লগ্নকে প্রথম ভাব ধরে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে গুণলে প্রথম ভাব বা লগ্ন, চতুর্থ, সপ্তম, অষ্টম এবং দ্বাদশ—এই ঘরগুলোর কোনো একটিতে মঙ্গল অবস্থান করলে জাতক বা জাতিকাকে মাঙ্গলিক দোষযুক্ত বলা হবে। এই মাঙ্গলিক দোষের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চরম অশান্তি, মারামারি এমনকী খুনোখুনি পর্যন্ত হতে দেখা যায়। মেয়েরা যেমন শশুরবাড়িতে চরম অত্যাচারিত হয়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়, ঠিক তেমনই বর্তমানে বহু পুরুষকে অত্যাচারী, ব্যভিচারী স্ত্রীর দ্বারা চরম লাঞ্ছনা ভোগ করতে দেখা যায়। স্বামীর চোখের সামনে অন্য পুরুষকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা খুশি তাই করছে, প্রতিবাদ করলে খুনের হুমকি দিচ্ছে—এরকম সমস্যা নিয়ে ভুরি ভুরি বিবাহিত নারী-পুরুষ চেম্বারে আসেন এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবার জন্য। আবার এই মাঙ্গলিক দোষের কারণেই অকাল বৈধব্য, স্ত্রীর মৃত্যু, আত্মহত্যা বা হঠাৎ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হতে দেখা যায়। কোর্ট-কাছারি, মামলা, ডিভোর্স অর্থাৎ বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি তো এই দোষেরই ফলাফল মাত্র। আবার এমনও সমস্যা নিয়ে দম্পতিরা আসেন সমাধান পেতে, যেখানে স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবনে শুধুই শূন্যতা বিরাজ করে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে শয্যা সুখ নেই। কেউ কেউ তো এক ঘরেই থাকেন না। এই দুরবস্থার জন্য দায়ী জন্মছকের দ্বাদশ ভাবের অশুভ অবস্থান। এক বা একাধিক নৈসর্গিক পাপগ্রহ যদি দ্বাদশ ভাবে অবস্থান করে তবে এই করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়। যেমন দ্বাদশ ভাবে যদি শনি বা শনি-মঙ্গল কিংবা রবি-মঙ্গল অথবা রাহু-শনি, শনি-রবি, কেতু-শনি, কেতু-মঙ্গল, কেতু-রবি, রাহু-রবি ইত্যাদির অবস্থান।
যাই হোক বিবাহের বিষয়ে আজকের দিনে যে আইনসমূহ প্রচলিত আছে সেকথা মাথায় রেখে খুব বিচার বিবেচনা করে তবেই বিবাহ সম্পন্ন করা উচিত। যোটক বিচার ছাড়াও পাত্র-পাত্রীর জন্মছকের নিখুঁত বিচার-বিশ্লেষণ করে যে যে দোষসমূহ পাওয়া যাবে তার যথাযথ শাস্ত্রীয় পদ্ধতি অনুসারে প্রতিকার, প্রতিবিধান করে, প্রতিকারের অন্তত তিন থেকে পাঁচ মাস পর কোনো শুভ দিন দেখে বিবাহ হলে সেই বিবাহিত দম্পতি সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করতে পারবে। কারণ বিষয়টা বাজার থেকে আলু-পটল কেনা নয় যে পচা হয়েছে বলে ফেরত দিতে পারবেন বা ফেলে দেবেন। তাই সব সময়একটা কথা মনে রাখবেন যে, ‘ভাগ্য সিদ্ধান্ত নেয় না, আপনার সিদ্ধান্তই আপনার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।
